সর্বশেষ

সফরে ঢাকায় জাতিসংঘ দূত, 'মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা'

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'সিরিজ মিটিংয়ে ব্যস্ত দিন পার করেছেন সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। গতকাল সফরের প্রথমদিন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন।'
 

আজ যাচ্ছেন কক্সবাজারে। সেখানে বাংলাদেশের মানবিক  আশ্রয়ে থাকা মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখা ছাড়াও শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। কক্সবাজার থেকে ফিরে আগামী ১৭ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একইদিনে রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বিশ মিলনায়তনে একটি সেমিনারে বক্তৃতা করার পাশাপাশি ঢাকার জাতিসংঘ অফিসের আয়োজনে বাংলাদেশে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী ও এনজিও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথক পৃথক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন। সমাপনী দিনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সফরের আউটকাম জানাবেন তিনি। তবে জাতিসংঘ দূতের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন। কথা বলেছেন আইনমন্ত্রীও। তারা উভয়েই মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।


-আইনমন্ত্রী বলেছেন, কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা নিয়ে বৈঠকে কথা হয়নি। বৈঠক সূত্র অবশ্য বলেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ পূনর্ব্যক্ত করেছেন স্বাধীনতার পর প্রথম ঢাকায় আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।  জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন মন্ত্রীরা।  দেশে এখন বিচারবহির্ভূত হত্যা নেই- পররাষ্ট্রমন্ত্রী: জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা মিশেল বাশেলেটের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন দাবি করেন, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা আগে হলেও এখন নেই। মন্ত্রী মোমেন বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে সরকার তা তদন্ত করবে।
 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে তারা বলে নাই। আমাদের নিজে থেকে বলেছি। এ রকম বলা হয়েছে যে, কিছু লোককে কিলিং করা হয়েছে। আমাদের এখানে আগে হতো ২০০০, ২০০৩ ওই সময়ে। হার্টফেলের সংখ্যা আর নাই। আমি গত পাঁচ-ছয় বছর দেশে আছি হার্টফেলের আর কোনো স্টোরি শুনি নাই। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে তদন্ত করা হবে। আমেরিকায় প্রতি বছর পুলিশ হাজারখানেক লোক মেরে ফেলে।  বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ড. মোমেন জানান, কিছু কিছু লোক নাকি বলেছে যে, ৭৬ জন লোক গত ১০ বছরে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা বলেছে, সরকার নাকি নিখোঁজ করেছে। ৭৬ জনের মধ্যে আবার ১০ জনকে পাওয়া গেছে। বাকিগুলো আমরা ঠিক জানি না। পরিবার কোনো তথ্য দেয় না। পরিবারকে বলা হয়, তারা ভয়ে আর কোনো তথ্য দেয় না। আমরা জানি না তারা কোথায় গেছেন। আলোচনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি এসেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওদের (জাতিসংঘ) ধারণা বাংলাদেশে টেলিভিশন মিডিয়াগুলোতে কোনো ফ্রিডম নাই। কেউ নিজের কথা বলতে পারে না। তাদের (গণমাধ্যম) সেন্সর করে। আমি বলেছি, আমার এমন কিছু জানা নেই। আমি তো দেখি আমাদের মিডিয়া ভেরি স্ট্রং। প্রাইভেট টেলিভিশন একটা কথা বললে ধরে ফেলে। তিনি বলেন, আমরাতো কখনো তাদের বলি নাই এটা বলবেন না।


- মিডিয়ার স্বাধীনতার প্রসঙ্গে বলেছি, আমরা এ সম্পর্কে জানি না। কিন্তু কেউ কেউ মনে হয় মনে করে। তারা মনে মনে চিন্তা করে। তাদেরকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেকগুলো মিডিয়া রেজিস্ট্রার্ড হয়েছে। বাংলাদেশে গভর্নমেন্টের মিডিয়া ছাড়া কোনো মিডিয়া নেই। আমি বললাম, সারা দেশে ২ হাজার ৮০০ পত্রিকা বের হয়। গভমেন্ট এগুলোর সেন্সর করে বলে আমার জানা নাই। সরকারের এত ক্ষমতাও নেই।  দেশে সিভিল সোসাইটির প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, দেশে সিভিল সোসাইটি নাকি নাই। এটা আমরা জানি না। সিভিল সোসাইটিতো সব জায়গায় থাকে। এনজিও আমাদের দেশে শত শত, কয়েক হাজার। এখানে প্রাইভেট ভলান্টিয়ার অরগানাইজেশন খুব বেশি নাই। মন্ত্রী মোমেন জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ খুব উদ্বিগ্ন এবং এ সমস্যা সমাধানে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি পূনর্ব্যক্ত করেছেন।  ওদিকে জাতিসংঘ দূতের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ হয়েছে। আলাপ হয়েছে ফ্রিডম অব প্রেস এবং ফ্রিডম অব স্পিস নিয়ে। আলাপ হয়েছে কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী মোশতাক বিষয়ে। আলাপ হয়েছে ট্রেইনিংয়ের ব্যাপারে।

 

আইনমন্ত্রী বলেন, উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে, ওনাদের সঙ্গে আমার যে কথা হয়েছে সেখানে আমি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আপনাদের সঙ্গে যে কথাগুলি বলেছিলাম, ঠিক সেই কথাগুলিই ওনাকে জানিয়েছি। উনি এটা আরও ভালো করে জানেন এই কারণেই, আপনারা জানেন যে, আমি একটা টিম করে দেই, যেটার মধ্যে লেজিসলেটিভ সচিব মহোদয় হচ্ছেন সভাপতি এবং যেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিরা আছেন। এই প্রতিনিধিরা ওনার যে অফিস। অফিসের সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বেস্ট প্র্যাকটিস নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন। সেটার একটি প্রতিবেদন আমার কাছে পৌঁছেছে, প্রতিবেদন আমি দেখার পরে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবো, সেটাই আমি বলেছি।


-মন্ত্রী বলেন, আমি রোহিঙ্গাদের কথা বলেছি। মোশতাক সম্পর্কে যখন উনি প্রশ্ন করেছেন, আমি পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা তাকে পড়ে শুনেয়েছি। তারপরে তিনি আর প্রশ্ন করেন নাই। দুইপক্ষই আমরা যেটা জোর দিয়েছি, সেটা হচ্ছে- আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য যারা আছেন, তাদেরকে ট্রেইনিংয়ের ব্যাপারে। তখন আমরা বলেছি, আপনারা একটা প্রস্তাব পাঠান, আমরা অবশ্যই সেটা বিবেচনা করবো।

সফরে ঢাকায় জাতিসংঘ দূত, 'মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা'

আইনমন্ত্রী বলেন, সবশেষে আমি যেটা শক্তভাবে তুলে ধরেছি, তা হলো আমাদের সরকারের অবস্থান। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মানবাধিকারকে সাংঘাতিক মূল্য দেয়। তার কারণ হচ্ছে যে, মানবাধিকার লংঘনের একজন ভিকটিম হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মানবাধিকার বিষয়ে সবসময়, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার মানবাধিকারকে সবসময় সমুন্নত রাখবে এবং আইন দ্বারা এটার ভায়োলেশন বন্ধ করা যায়, সেই ব্যাপারে সক্রিয় থাকবেন।

'ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে তারা কী কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে? জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো উদ্বেগ ছিল না, এটা আলোচনার মধ্যে আসছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে অবজার্ভেশন কী, এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ''সেটা উনি বলবেন, আমি বলবো না।''

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত